হঠাৎ
অরিত্র দাশ
অরিত্র দাশ
কর্মব্যস্ত
মিছিলের সুটেড বুটেড সুটকেশ হাতে এক প্রতিনিধির ধাক্কা খেয়ে সুনয়নার বাজারের
ব্যাগটা ছিটকে পড়ল।'দেখে
চলতে পারেন না'
বলে চোখটা উপরে তুলে তাকাতে
গিয়ে সুনয়না যেন অষ্টম আশ্চর্য দেখে ফেলেছে।রঞ্জন! তাও সুটকেশ হাতে অফিসে!বি টেক
পড়ার সময় থেকেই অগোছালো পাগলাটে ছিল।তবে সেই পাগলেরই সে প্রেমে পড়েছিল।প্রেম যখন
বয়স্ক হয়,তখন সে পরিনত হয়।সেইসময়ই একদিন
হিসেবের খাতা খুলে জিঞ্জাসা করেছিল 'আর কতদিন
ঘুরবি উদ্দেশ্যহীনভাবে?'রঞ্জন
আঁতকে উঠেছিল'উদ্দেশ্যহীন? তুই জানিস ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফি
আমার হবি।নেশা আর পেশা আমি আলাদা করতে পারব না।' সুনয়না তাকে সেদিন বুঝিয়ে দিয়েছিল তার হাতে অগাধ সময় নেই।রঞ্জনের
সঙ্গে লক্ষ্যহীন ভাবে ঘুরে সেও তার কেরিয়ারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায় না।
আজ
রঞ্জনকে দেখে একটা তীব্র রাগ সুনয়নার শিরদাড়া বেয়ে নীচে নেমে গেল।তার কথাটা যদি
আগে সে বুঝত।ব্যাঙ্গাত্মক হেসে কটাক্ষ করে উঠল'বাবুর তাহলে নেশা আর পেশাটা আলাদা হল।'রঞ্জন রাগল না।সময় তার সমস্ত আবেগকে
বরফ করে দিয়েছে।শীতল কন্ঠে সে উত্তর দিল 'আমি
পারলাম না।আমি হেরে,হারিয়ে
যাওয়া একটা মানুষ।কিন্তু তুই অফিস টাইমে বাজারের ব্যাগ হাতে কি করছিস?অফিস ছুটি নিয়েছিস?'
যে
সুনয়না ভাবছিল রঞ্জনকে উপহাস্যে শেষ করে দেবে সেই যেন কেমন গুটিয়ে গেল।'বাচ্চা হওয়ার পর আমি চাকরি ছেড়ে
দিয়েছি।' 'তুই চাকরি ছেড়ে দিলি?' 'সফটওয়ারে প্রচন্ড চাপ ছিল।বাচ্চা
হওয়ার পর শ্বশুরবাড়ি থেকে জোর করে ছাড়িয়ে দিল।' রঞ্জন অট্টহাস্যে ফেটে পড়ল।সুনয়না আমতা আমতা করে বলল'আমরা সেই দুজনেই নিজের জায়গাটা ছেড়ে
দিলাম।কিন্তু মাঝখান থেকে আমাদের বিয়েটা হল না।' রঞ্জন বলল'দুঃখ
করিস না।ভালবাসা আমাদের মধ্যে কোনদিনই ছিল না।ছিল একটা ফ্যান্টাসি।ভালবাসায় নিজের
জায়গাটা অপরের জন্য ছাড়তে হয়।ফ্যান্টাসি দিয়ে সংসার পাতা যায় না।যাক এবার আমি আসি
রে।বড্ড দেরি হয়ে গেল।ভাল থাকিস।'
সুনয়না
রঞ্জনের দিকে তাকিয়ে রইল যতক্ষন না সে দৃষ্টির আড়াল হয়।
0 মন্তব্যসমূহ