জৈষ্ঠের বৃষ্টি
                 
আল-আমিন খান সাগর
মেঘলা আকাশ, ঘোমট গরম।ঝমঝমানি জৈষ্ঠের বৃষ্টি।রাত দিনে একবার আসে।প্রবল বৃষ্টি থাকে ঘণ্টাখানেক।কোন দিন আধ ঘণ্টা।ভারী এ বৃষ্টিতে ভরে গেছে মাঠ ঘাট।তলিয়ে গেছে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথ।বেড়ে গেছে ব্যাঙ , কারা আর কেঁচোর উপদ্রব।
ধান কাটা এ মৌসুমে  নিচু ক্ষেত গুলো তলিয়ে  গেছে।ইঞ্চি দুয়েক নিচে তলিয়ে থাকা ধানের শীষ গুলো বেজার মুখে দাড়িয়ে আছে নিঃশব্দে ।
বক চড়ার এক পাশে জমির শেখের বার ডিসিমাল ক্ষেতে ধানের শীষ গুলো দাড়িয়ে আছে কোন মতে গলা বাঁচিয়ে।
আজ রবিবার, মেঘলা আকাশ, হালকা বাতাস বয়ছে।এই বুঝি কেঁদে দিবো আকাশ। নামি নামি বৃষ্টি মাথায় দুজন কামলা সাথে ধান কাটছে জমির।মেশিনের মত হাত চলছে তাদের।" বুচচাও জমির বাই,ধানে গেচ জালায়ে গেছে। গোছা ধরা যায় না।খালি হিঞ্জা নিয়া নেও।"বলে বিষন্ন মুখে কাঞ্চু। বিষন্ন মুখে মাথায় গামছা বাধতে বাধতে বিপন্ন আকাশের দিকে চেয়ে জবাব দেয় জমির,"কি আর করার বাই, যা যাবার গেছে।ধীরে ধীরে কাট।বেশি কাবা যাবার দরকার  নাই।"
জমির শেখ বউ পোলাইপান নিয়ে ভালোই চলে।পালে বাছুর সহ তিনটা গরু।সেও পরার ক্ষেতে কামলা খাটে।বহু কষ্টে কিছু জমানো টাকা দিয়ে জমিটা লিজ নিছে।এমন সোনার জমি হাত ছাড়া হওয়ার ভয়ে পালের বড় গরুটাও বেঁচে দিচে।
ট্রাক্টর দিয়ে হাল চষে ভালো বীজ কিনে ক্ষেত বুনেছে।নিজ হাতে তুলে দিছে আগাছা। নিড়িয়ে দিছে দুবার কামলা নিয়ে।ঠিক সময়ে সার দিছে।কীটনাশক দিছে।স্ক্রিমে পানি দেওয়া সত্ত্বেও নিজে পাশের ক্ষেতের আল  কেটে পানি দিছে।ফাঁদ পেতে বসে থেকেছে রাতের পর রাত।ফলন ও হয়েছিল ভালো। ধান হয়েছিল হিংসে করার মত।চোখ জুড়িয়ে গেত ধান দেখে।বুক ভরে গেত অনাবিল সুখে।মুখ ভরে আসতে গান।
জমির মানত ও করেছিল।সহি সালামতে ধান ঘরে উঠলেই জুম্মায় শিন্নি দিবো। আগেই বলে রেখেছিল মোল্লাকে "হুজুর দুয়া কইরেন পায়েস যেন খাওয়াতে পারি"।
কিন্তু  ডাইলে পানি দিয়ে দিল এই অলক্ষুণে বৃষ্টি।ডুবিয়ে দিল ক্ষেত ভরা সোনা।ভাসিয়ে দিল সব সার্থক শ্রম।
আটশ টাকা করে কামলা।ছয়শ টাকা মণ ধান।
দুজন কামলা সাথে গামছা মাথায় ধান কাটছে জমির শেখ।ক্লান্ত বিষন্ন মুখ।আকাশ ছেয়ে গেছে ঘন কালো মেঘে।বয়ছে ঝড় বাতাস। মাথা উপর চমকাচ্ছে বিদুৎ।আটশ টাকা করে কামলা, ছয়শ টাকা মণ ধান।গামছা মাথায় ক্লান্ত মুখে ধান কাটছে জমির শেখ।