স্বপ্ন                                                                      
কিভাবে লেখাটা শুরু করব বুঝতে পারছিনা
যাই হোক শুরু তো করেছি এবার ঘটনার দিকে এগোই
আমার নাম তমাল চক্রবর্ত্তী৷
পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়াতে৷ জন্ম যদিও তমলুকে মামার বাড়িতে এবং প্রথম শ্রেনী থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত মামার বাড়িতেই থেকে পড়েছি৷ পঞ্চম শ্রেনীর পর কোথায় পড়লাম সেটা কাহিনী পরিনতির দিকে এগোলে দেখতে পাবেন৷ যাই হোক এবারে আমি যার সাথে আপনাদের আলাপ করাবো এ হচ্ছে আমার বন্ধু থুড়ি বান্ধবী৷
এর নাম পায়েল যদিও আমি ওকে নুপুর বলে ডাকি৷ আমার মামা বাড়ির পাশেই তখন ভাড়ায় থাকত ওরা৷ এটা ১৯৯৮ এর ঘটনা৷ এবার যা  বলবো তা  ২০১৪সাল এর অক্টোবর মাসের  ৪ তারিখ রাতে হঠাৎ দেখা  একটা স্বপ্ন থেকে শুরু হচ্ছে এই কাহিনী৷ স্বপ্নটা আমি-ই দেখেছিলাম৷
স্বপ্নে অপরিচিত একটা বাচ্চা মেয়েকে আমার নাম ধরে ডাকতে দেখে চমকে উঠি, আর সেই রাতে ঠিকঠাক ঘুমোতে পারেনি৷
পর দিন ঘুমটা যখন ভাঙল তখন আর রাতের কথা কিছুই মনে নেই....
দেরিতে ঘুমটা ভেঙেছে তাই তাড়াতাড়ি করে তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেলাম কলেজে, ক্লাস টেস্ট ছিল ওইদিন৷
       
কয়েকদিন পর দুপুরের  খাওয়া সেরে আমি মায়ের সাথে ঘর গোছানোয় মন দিয়েছি, পর দিন ঘরে সত্যনারয়ন পুজো হবে৷  মা একটা  ভাঙা ট্রাঙ্ক বাইরে ফেলেদিয়ে
বলল দরকারি কিছু ট্রাঙ্কটাতে আছে কিনা দেখে নিতে। আমি দেখলাম তেমন কিছুই নেই ট্রাঙ্কটাতে, তবে একটা পুরানো ফোটো আলবাম পেলাম,
ভাবলাম থাক এটা রাখি পুরানো কোনো ছবি পেলে গুছিয়ে রাখবো সবাই কে দেখাব, ফেসবুকে দেবো৷
       
কিছুদিন পর হঠাৎ আমার  বই এর তাকে ইঁদুরের উৎপাত এর ফলে কিছু একটা পড়ার শব্দ পেলাম,
গিয়ে দেখি আলবামটা খোলা অবস্থায়  পড়ে রয়েছে আর একটা ছবি, বিশ্বাস করুন হঠাৎ করে আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল৷ ছবিটা সেই বাচ্চা মেয়েটার যার সঙ্গে আমি  আর আমার বড় মামা দাড়িয়ে আছি৷ আমি মেঝেতে মাথা গুঁজে বসে ভাবতে লাগলাম...
আস্তে আস্তে  সব মনে পড়ে যাচ্ছে এ তো সেই বছর পনেরো অাগের তোলা ছবি, আর মেয়েটা, মেয়েটা পায়েল আমি আদর করে নুপুর বলে ডাকতাম৷ ওরা ছিল মামাদের পাশের বাড়ির ভাড়াটিয়া।। (আগেই বলেছি)
মামা বাড়িতে থেকে পড়ার সময় নুপুর-ই ছিল আমার সঙ্গের সঙ্গী৷ ওর সাথে ছোটো বেলায় করা খুনসুটি গুলো মনে পড়তে লাগলো এক এক করে৷ একদিন স্কুলে নুপুর কয়েতবেল খাচ্ছিল আমি চাইলাম আমায় দিলোনা বলে কিনা নিজে কিনে খাস৷ আমিও কি ছাড়ার পাত্র! সেই রাগে পর দিন স্কুল যাওয়ার সময় যেইনা আমায় ডাকতে এলো, অমনি কাঁচি দিয়ে ক্যাচ করে ওর চুলটা কেটেদিলাম৷
খুব মার খেয়েছিলাম মায়ের হাতে সেদিন শুধু বড় মামার জন্যই বেঁচে গেছিলাম।।তার ঠিক কয়েকদিন পর আমার এক্সিডেন্ট হয়,আর তারপর থেকে আমার বাড়ির লোক আমায় মামা বাড়ি যেতে দিতনা৷
      
দেখতে দেখতে পনেরো বছর কেটে গেছে সব কিছু প্রায় ভুলেই গেছিলাম, কিন্তু আজ ওই ছবিটা পুনরায় সব মনে করিয়ে দিল৷ সঙ্গে সঙ্গে মেঝে থেকে উঠেই মামা কে ফোন করি নুপুরের খবর জানার জন্য৷  জানলাম যে ওর বাবা বদলি হয়েছে বারো বছর আগে কোথায় আছে সেটা ঠিক জানে না তবে মামা খবর নিয়ে পরদিন জানাবে বলল৷
        
সকালে কলেজ গেছি সামনে থার্ড ইয়ারের ফাইনাল এগ্জাম তবে পড়ার প্রতি একেবারেই মন বসছে না৷ মনটা শুধু ছটফট করছে নুপুেরর খবর জানার জন্য, প্রানটা ওকে দেখার জন্য  ব্যাকুল হয়ে উঠছে৷ বার বার ফোন দেখছি কখন মামার ফোন আসবে।
      
সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ মামা ফোন করল বলল ওর বাবার চাকরি বদলি হয়েছে খড়গপুরে৷ ঠিক করলাম  আমি অার মামা দুজনে কাল সকালে যাবো নুপুরের বাড়ি৷ সারা রাত ঘুমোতে পারিনি কেন জানি মনে হচ্ছিল আর এক মুহুর্তও নুপুরকে ছাড়া বাঁচবোনা৷ ভাবলাম কালই ওকে বলব আমার মনের কথা৷ ক্লাস ফাইভেই তো নুপুর  একবার কিস্ করে হাত দুটো ধরে বলেছিল " আমি তোকে খুব ভালোবাসি৷ উত্তরটা আমি দিতে পারিনি কারণ তার পরদিনই আমার এক্সিডেন্টটা হয়েছিল৷ সাত পাঁচ ভেবে রাতে ঘুমোলাম অনেক দেরিতে, সকালে মামার ডাকে ঘুম ভাঙল। তারপর দুজন রওনা হলাম ৪১নং জাতীয় সড়ক পার করে  বম্বে রোড ধরে নুপুরের বাড়ির উদ্দেশ্যে৷ আমি মামার বাইকের পেছনে বসে নতুন প্রেমের ঘর বাঁধার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছি৷
পাড়ায় ঢুকে ওদের বাড়ি খুঁজে পেতে খুব একটা সমস্যা হল না আমাদের৷ একজন কে নুপুরের  বাবার নাম  বলতেই সে নিয়ে গিয়ে নুপুরদের বাড়ি দেখিয়ে দিল৷ প্রথমে ওর বাবা চিনতে পারেননি আমাদের। অগত্যা মামা-ই পরিচয় দিয়ে বলল আমি তমলুকের বিল্টু৷ অার আমার সাথে....
উনি মামা কে থামিয়ে দিয়ে বললেন "তমাল তো, বাপ রে কত বড় হয়ে গেছিস"৷
আমার মনে তখন শুধু একটাই চিন্তা কখন পাবো মনপাখির দেখা৷ অগত্যা লজ্জার মাথা খেয়ে বলেই ফেললাম নুপুরও তো অনেক বড় হয়ে গেছে, কিন্তু সে কই? তাকে কেনো দেখছিনা৷ ওর বাবা বললেন দোতলায় ওর ঘরে আছে যাও....
দোতলার প্রথম ঘরটা ওর৷ শোনা মাত্রই লাড্ডু ফুটল  মনে এক মুহুর্ত দেরি না করে  দোতলার দিকে পা বাড়ালাম
ভাবছি এতো দিন পর দেখা হবে কি বলব নুপুর কে? আদৌ কি ও চিনতে পারবে আমায়! দিলিপ কুমারের অভিনয় দেখিনি তবে সাহরুক অভিনীত দেবদাসে সাহরুকের প্রথম আত্ম প্রকাশে যেমন বাংলায় বলেছিল "কেমন আছো পারু?" তারই  মতো করে বলব কেমন আছো নূপুর???
এই নাম নুপুর চেনে..
ও ঠিক বুঝে যাবে অামি কে৷
নুপুরের ঘরের দরজাটা এমনি টানা ছিলআনন্দে দুরু দুরু বুকে জোর করে দরজাটা খুলে দিয়েই আমি
দেখে অবাক হয়ে গেলাম, অপরুপ ভাবে সাজানো ঘরটা যেন আমার আসার অপেক্ষায় সাজানো খুব সুন্দর করে খবু যত্ন করে সাজানো বিছানা৷ আর বিছানার উপর খুব সুন্দর আর খুব বড় একটা ছবি,ছবিটার উপর মালা দেওয়া আর পাশে ধূপ আর প্রদীপ জ্বলছে৷ তার পর আর কিছু মনে নেই৷ কতদিন আমার জ্ঞান ছিলনা আমি জানিনা৷ তবে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়তে পড়তে দেখেছিলাম ওর ছবিতে কিছু লেখা আছে৷ আর আমি যা দেখেছিলাম তা এখানে
হুবহু তুলে দিলাম৷
পায়েল  মিশ্র
জন্ম ১৯৯২ ফেব্রুয়রি ১০
মৃত্যু ২০১৪অক্টোবর ০৪
ঠিক যেদিন আমি স্বপ্নটা দেখেছিলাম৷

©কুমার প্রনবেশ